আকাশলীনা কবিতা – কবিতাটি জনপ্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ এর লেখা।
জীবনানন্দ দাশ (১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ – ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪; ৬ ফাল্গুন, ১৩০৫ – ৫ কার্তিক, ১৩৬১ বঙ্গাব্দ) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মিলে। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।
মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল, ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন। বুদ্ধদেব বসু তাঁকে ‘নির্জনতম কবি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে, অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁকে ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন। সমালোচকদের অনেকে তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি বলে মনে করেন।
জীবনানন্দের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয়। ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মাঝে রয়েছে রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।
আকাশলীনা কবিতা – জীবনানন্দ দাশ

সুরঞ্জনা, ওইখানে যেওনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা:
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;
ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূরে— আরো দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেওনাকো আর।
কি কথা তাহার সাথে? তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ:
তার প্রেম ঘাস হ’য়ে আসে।
সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাস:
বাতাসের ওপারে বাতাস—
আকাশের ওপারে আকাশ।
আকাশলীনা কবিতা এর ইতিহাসঃ
এই কবিতাটা প্রথম প্রকাশিত হয় ‘কবিতা’ পত্রিকায় ১৯৩৮ সালে। নাম ছিল ‘ও হৈমন্তিকা’।স্বাভাবিকভাবেই কবিতার ভিতরেও সুরঞ্জনা ছিল না, ছিল হৈমন্তিকা। জীবনানন্দ দাশ তাঁর সাতটি তারার তিমির বইতে এই কবিতাটা যখন ঢুকালেন, তখন হুট করেই এর নাম দিলেন বদলে। কেন করলেন এই কাজটা, সেটা কেউ জানে না। অজ্ঞাতই রয়ে গিয়েছে এর অন্তরালের কাহিনি। শুধু কবিতার শিরোনাম বদলই না, সেই সাথে মূল চরিত্রের নামও তিনি দিলেন বদলে। হৈমন্তিকাকে বাদ দিয়ে তিনি নিয়ে এলেন সুরঞ্জনাকে। হৈমন্তিকার দুর্ভাগ্য, বর্জিত হয়ে হতভাগিনী হতে হলো তাকে। আর সৌভাগ্য সুরঞ্জনার, সাদরে গৃহীত হলো সে। কবির হুট করে নেওয়া আকস্মিক সিদ্ধান্তে কোটি কোটি বাঙালি তরুণের প্রাণে জায়গা হয়ে গেলো সুরঞ্জনা নামের প্রেমময় তরুণীটির অনাদিকালের জন্য।
এখন যেমন প্রেমিকরা তাদের প্রেমিকা অন্য কোনো যুবকের সাথে একটুক্ষণ বেশি থাকলে কিংবা সামান্য একটু আগ্রহ দেখালে কৃত্রিম হতাশা দেখিয়ে বলে, ‘সুরঞ্জনা, ওইখানে যেও নাকো তুমি, বোলো নাকো কথা ওই যুবকের সাথে’, ইতিহাসের একটা সামান্য ঘটনা, সেই সময়কার জন্য একেবারে তুচ্ছ এবং অপ্রভাববিস্তারকারী ঘটনা না ঘটলে, এই কথাটা হয়তো বাংলার প্রেমিককুল ভিন্নভাবে বলতো আজ।
আকাশলীনা কবিতা আবৃত্তিঃ
আরও দেখুনঃ