বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক স্থান রচনা । Essay on A historical place of Bangladesh । প্রতিবেদন রচনা ও সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নোত্তর

Table of Contents
বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক স্থান রচনা
ভূমিকা :
ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ আমাদের বাংলাদেশ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শাসক এ দেশকে শাসন করেছেন। তারা তৈরি করেছেন বিভিন্ন সুরম্য প্রাসাদ, মন্দির, মসজিদ ইত্যাদি। এগুলাে এখন আমাদের দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের দেশ প্রাকৃতিকভাবেও মনােরম। এ দেশের বন, পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গলও আমাদের দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান :
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে । দিনাজপুরের কান্তজী মন্দির, নওগার পাহাড়পুর, বগুড়ার মহাস্থানগড়, নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি (উত্তরা গণভবন) ও রানি ভবানীর বাড়ি, পুঠিয়ার জমিদারবাড়ি, গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ি, ঢাকার আহসান মঞ্জিল, নারায়ণগঞ্জের সােনার গাঁ, কুমিল্লার ময়নামতি ইত্যাদি। প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে : দিনাজপুরের রামসাগর, নাটোরের চলনবিল, নেত্রকোনার বিড়িসিরি, সিলেটের জাফলং, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ইত্যাদি।

দর্শনীয় স্থান হিসেবে নাটোর :
রাজশাহী বিভাগের একটি জেলা শহর নাটোর। এর উত্তরে রয়েছে নওগাঁ ও বগুড়া জেলা, দক্ষিণে পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলা, পূর্বে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে রাজশাহী জেলা অবস্থিত। নাটোর জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য বেশ প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। এখানে ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক উভয় ধরনের দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
নাটোরের ঐতিহাসিক স্থান :
১৮৬৯ সালে নাটোর মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। পরবর্তীকালে নাটোর পূর্ণাঙ্গ জেলায় পরিণত হয়। প্রাচীন শহর হওয়ায় নাটোরে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা লক্ষ করা যায়। তার মধ্যে দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি ও ছােটতরফ রাজবাড়ি উল্লেখযােগ্য। রানি ভবানীর কীর্তি নাটোরের মানুষ এখনাে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। রানি ভবানীর কীর্তি । একজন দক্ষ জমিদার প্রজাদরদি হিসেবে রানি ভবানীর নাম সর্বজনবিদিত। তিনি অনাড়ম্বর জীবনযাপনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজহিতৈষী ও উদার মনােভাবের অধিকারী ছিলেন। তিনি শত শত মন্দির, অতিথিশালা ও রাস্তা নির্মাণ করেন। প্রজাদের পানীয় জলের অভাব দূর করার জন্য তিনি অনেকগুলাে পুকুর খনন করেন। তিনি শিক্ষাবিস্তারে আগ্রহী ছিলেন।

দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি :
নাটোর শহর থেকে প্রায় ২.৪০ কিলােমিটার দূরে দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি অবস্থিত। রাজা দয়ারাম রায় এ রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু ১৮৯৭ সালে নাটোরে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। এতে দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে দেশি-বিদেশি স্থপতি ও শিল্পীদের দ্বারা রাজা প্রমদানাথ রায় রাজবাড়িটি পুনর্নির্মাণ করেন।
এ রাজবাড়ি প্রায় ৪৩ একর জমির উপর নির্মিত। সমস্ত রাজবাড়িটি উঁচু দেয়াল দ্বারা আবৃত। রাজবাড়িতে ঢােকার মুখে একটি সিংহদ্বার রয়েছে। এ সিংহদ্বারের দুই প্রান্তে দুটি কামান রয়েছে এবং মাথার উপরে রয়েছে একটি সুদৃশ্য বড় ঘড়ি। মূল ভবনের ভেতরের সাজসজ্জা ও আসবাবপত্র এখনাে মানুষকে বিস্মিত করে। ভবনের পেছন দিকে রয়েছে একটি বাগান।
এখানে দুপ্রাপ্য অনেক গাছ আছে। সমস্ত রাজবাড়িটি একটি গভীর ঝিল দ্বারা পরিবেষ্টিত। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন গভর্নর মােনায়েম খান। দিঘাপতিয়া রাজবাড়িকে দিঘাপতিয়া গভর্নর হাউস’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিঘাপতিয়া রাজবাড়িকে ‘উত্তরা গণভবন’ নামে স্বীকৃতি প্রদান করেন।
ছােটতরফ রাজবাড়ি । নাটোর জেলার বঙ্গজল নামক স্থানে ছােটতরফ রাজবাড়ি অবস্থিত। রাজা চন্দ্রনাথ রায়, যােগেন্দ্রনাথ রায়, জীতেন্দ্রনাথ রায় ও বীরেন্দ্রনাথ রায়ের তত্ত্বাবধানে রাজবাড়িটি পরিচালিত হতাে। বর্তমানে এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে রয়েছে। ছােট তরফের ভেতরে অনেকগুলাে গভীর পুকুর রয়েছে রাজবাড়ির সীমার মধ্যে মন্দির রয়েছে সাতটি। এ ছাড়া দুটি বড় ভবন এবং বেশ কয়েকটি ছােট ভবন রয়েছে।

চলনবিল :
নাটোরের প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানগুলাের মধ্যে চলনবিল একটি । বর্ষার সময় চলনবিল পানিতে ভরে যায়। তখন এর সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে অনেক পর্যটক এখানে বেড়াতে আসে। চলনবিলের উপর নৌকায় ঘুরে তারা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পূর্ণভাবে উপভােগ করে।
নাটোরের কাঁচাগােল্লা :
ঐতিহাসিকভাবে নাটোরের কাঁচাগােল্লা মিষ্টি সুপ্রসিদ্ধ। দুধ দ্বারা কাঁচাগােল্লা প্রস্তুত। করা হয়। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী এ মিষ্টির খ্যাতি রয়েছে।
উপসংহার :
শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতাে সুন্দর বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সৌন্দর্যের কোনাে তুলনা। নেই। ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক উভয় দিক থেকেই আমাদের দেশ সমৃদ্ধ। আমরা অনেকেই টাকা খরচ করে। দেশের বাইরের সৌন্দর্য দেখতে যাই। কিন্তু আমাদের দেশ যে সৌন্দর্যের লীলাভূমি তা হয়তাে অনেকেই জানি না। দেশকে ভালােভাবে চিনে-জেনে দেশের সৌন্দর্য উপভােগে আমাদের তৎপর হওয়া উচিত ।
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানঃ
প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রাচীন শহর কোনটি?
উঃ পুন্ড্রবর্ধন। বর্তমানে মহাস্থানগড়।
প্রশ্ন: মহাস্থানগড় কোথায় অবস্থিত?
উঃ বগুড়া।
প্রশ্ন: খোদার পাথর ভিটা কোথায় অবস্থিত?
উঃ মহাস্থানগড়।
প্রশ্ন: বৈরাগীর ভিটা কোথায় অবস্থিত?
উঃ মহাস্থানগড়।
প্রশ্ন: বৈরাগীর চালা কোথায় অবস্থিত?
উঃ গাজীপুর।
প্রশ্ন: আনন্দ রাজার দীঘি কোথায় অবস্থিত?
উঃ কুমিল্লার ময়নামতিতে।
প্রশ্ন: রামুমন্দির কোথায় অবস্থিত?
উঃ কক্সবাজারের রামু থানায়।
প্রশ্ন: উত্তরা গনভবন কোথায়?
উঃ নাটোর।
প্রশ্ন: কান্তজির মন্দির কোথায় অবস্থিত?
উঃ দিনাজপুর।
প্রশ্ন: বাঘা জামে মসজিদ কোথায় অবস্থিত?
উঃ রাজশাহী।
প্রশ্ন: পানাম নগর কোথায় অবস্থিত?
উঃ সোনারগাঁয়ে।
প্রশ্ন: আফগান দুর্গ কোথায় অবস্থিত?
উঃ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মধ্যে।
প্রশ্ন: আহসান মঞ্জিল কে নির্মাণ করেন?
উঃ নবাব আব্দুল গনি।
প্রশ্ন: মহাস্থানগড়ের কোন যুগের শিলালিপি পাওয়া গেছে?
উঃ মৌর্য যুগের।
প্রশ্ন: সোমপুর বিহার কোথায় অবস্থিত?
উঃ নওগাঁ জেলার পাহাড়পুরে।
প্রশ্ন: পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিজারটি কি নামে পরিচিত?
উঃ সোমপুর বিহার।
প্রশ্ন: সোমপুর বিহার কে তৈরী করেন?
উঃ শ্রী ধর্মপাল দেব।
প্রশ্ন: সত্য পীরের ভিটা কোথায় অবস্থিত?
উঃ নওগাঁ জেলার সোমপুর বিহারে।
প্রশ্ন: শালবন বিহার কোথায় অবস্থিত?
উঃ কুমিল্লা জেলার ময়নামতিতে।
প্রশ্ন: শালবন বিহার কে তৈরী করেন?
উঃ রাজাধিরাজ ভবদেব।
প্রশ্ন: আনন্দ বিহার কোথায় অবস্থিত?
উঃ কুমিল্লা জেলার লালমাই পাহাড়ে।
প্রশ্ন: আনন্দ বিহার কে তৈরী করেন?
উঃ রাজা আনন্দ দেব।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার কোনটি?
উঃ সীতাকোট বিহার।
প্রশ্ন: সীতাকোট বিহার কোথায় অবস্থিত?
উঃ দিনাজপুর।
প্রশ্ন: সোনারগাঁও কোন আমলে বাংলাদেশের রাজধানী ছিল?
উঃ মূঘল আমলে।
প্রশ্ন: বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয় কে স্থাপন করেন?
উঃ ঈশা খাঁ।
প্রশ্ন: সোনারগাঁ কার নামানুসারে নামকরণ হয়েছে?
উঃ ঈশা খাঁর স্ত্রী সোনা বিবির নামে।
প্রশ্ন: সোনারগাঁর পূর্বে বাংলার রাজধানী কোথায় ছিল?
উঃ মহাস্থানগড়।
প্রশ্ন: পাঁচ বিবির মাজার কোথায় অবস্থিত?
উঃ সোনারগাঁতে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের একমাত্র লোকশিল্প যাদুঘরটি কোথায় অবস্থিত?
উঃ সোনারগাঁতে।
প্রশ্ন: সোনারগাঁয়ের পূর্ব নাম কি?
উঃ সুবর্ণ গ্রাম।
প্রশ্ন: ঢাকায় সর্বপ্রথম বাংলার রাজধানী হয়?
উঃ ১৬১০ সালে।
প্রশ্ন: বাংলার রাজধানী রাজস্থান থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন কে?
উঃ সুবেদার ইসলাম খান।
প্রশ্ন: তাঁরা মসজিদ কোথায় অবস্থিত?
উঃ পুরানো ঢাকায়।
প্রশ্ন: বজরা শাহী মসজিদ কোথায় অবস্থিত?
উঃ নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জে।
প্রশ্ন: মুজিব নগর কোথায় অবস্থিত?
উঃ মেহেরপুর।
প্রশ্ন: মহামুনি বিহার কোথায় অবস্থিত?
উঃ চট্টগ্রামের রাউজানে।
প্রশ্ন: ষাট গম্ভুজ মসজিদ কোথায় অবস্থিত?
উঃ বাগেরহাট।
প্রশ্ন: ষাট গম্ভুজ মসজিদ নির্মাণ করেন?
উঃ খান জাহান আলী।
প্রশ্ন: লালবাগ কেল্লা কে নির্মাণ শুরু করেন?
উঃ যুবরাজ মোহাম্মদ আযম।
প্রশ্ন: লালবাগ কেল্লা কে নির্মাণ শেষ করেন?
উঃ শায়েস্তা খান।
প্রশ্ন: লালবাগ কেল্লার আদি নাম কি?
উঃ আওরঙ্গবাদ দুর্গ।
আরও পড়ুনঃ