দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ রচনা । Essay on Science in everyday life । প্রতিবেদন রচনা ও সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নোত্তর

দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ রচনাঃ  আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার প্রায় সকল আবিষ্কার ও প্রযুক্তির মূলে রয়েছে বিদ্যুৎ।   শিল্প,কৃষি,পরিবহণ,স্কুল, কলেজ,অফিস সহ বাড়ির দৈনন্দিন কাজে বিদ্যুতের অবদান অপরিসীম।প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্যুতের গুরুত্ব নিয়ে আজকের প্রতিবেদন ।

দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ রচনা

দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ রচনা । Essay on Science in everyday life
দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ রচনা । Essay on Science in everyday life

ভূমিকা:

একুশ শতকের আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানের এ যুগে বিদ্যুতের অবদান অনির্ণেয়। বৈজ্ঞানিক ভােল্টা বিদ্যুৎশক্তি আবিষ্কার করে মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক কালজয়ী অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। মানবজীবন ও সভ্যতার চেহারা এত যে বদলে গিয়েছে এর পেছনে আছে বিদ্যুতের ঐন্দ্রজালিক শক্তি।

বিদ্যুৎবিহীন আধুনিক জীবন ব্যবস্থাপনা অকল্পনীয়। মানুষের দৈনন্দিন জীবন আর বিদ্যুৎ একটি অন্যটির সাথে ওতপ্রােতভাবে জড়িত। বিদ্যুৎবিহীন মানুষের জীবন যেমন অন্ধকার তেমনি মানবসভ্যতাও অচল।

অসাধ্য সাধনে বিদ্যুৎ:

যে কাজ করতে হাজার হাজার মানুষের হাজার ঘণ্টা আর প্রচুর শ্রমের প্রয়ােজন হতাে বিদ্যুৎ সে কাজ
করছে মাত্র কয়েক মিনিটে। লক্ষ মানুষের সমন্বিত শ্রম যে কাজ করতে সম্পূর্ণ অক্ষম বিদ্যুৎশক্তি সেখানে শতভাগ সক্ষম। যান্ত্রিক কলকারখানা চালনার ক্ষেত্রে বিদ্যুতের ভূমিকা প্রধান।

আধুনিক যে কম্পিউটার গােটা বিশ্বকে এমন করে নিয়ন্ত্রণে এনেছে সে কম্পিউটারও বিদ্যুৎবিহীন অচল। মােটকথা, মানুষের পক্ষে যা দুরূহ বিদ্যুৎ তাকে সহজসাধ্য করেছে। জীবনকে সুন্দর ও সহজসাধ্য করতে বিদ্যুৎ পালন করছে অগ্রণী ভূমিকা।

মানুষ নিজ গ্রহ পৃথিবী পাড়ি দিয়ে ভিন গ্রহে অচেনা জগৎকে হাতের মুঠোয় আনতে সাহস করছে। মহাশূন্যে যে নভােযান ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবস্থান করছে সে নভােযানগুলাের প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করছে বিদ্যুৎ।

দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ রচনা । Essay on Science in everyday life
দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ রচনা । Essay on Science in everyday life

দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ:

মানুষের প্রতিদিনকার যাপিত জীবনে বিদ্যুৎ একটি অনিবার্য অনুষঙ্গ। কী গ্রামীণ জীবনে, কী নাগরিক জীবনে সর্বত্রই বিদ্যুতের উপস্থিতি অপরিহার্য। পল্লি বিদ্যুৎ’ নামে সারা বাংলার পথে-প্রান্তরে এখন বিদ্যুতের বাতি জ্বলছে। গ্রামেগঞ্জে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের জীবনে ব্যাপকভাবে বিদ্যুতের এ ব্যবহার প্রকৃতপক্ষে মানবসভ্যতাকেই আসীন করছে সুউচ্চে।

নগর জীবন বিদ্যুৎ ছাড়া অকল্পনীয়। একদিন যদি কোনাে এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা যায় সেখানেই লক্ষ করা যায় কী দুর্বিষহ মানবজীবন। শহুরে অফিস-আদালত, শিল্পকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ ব্যতীত তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারে না । তাই দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের অনিবার্য অবদানকে অস্বীকার করা যায় না।

দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ রচনা
দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ রচনা

শিল্পোন্নয়নে বিদ্যুৎ:

সভ্যতার বিকাশে শিল্পোন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিন্তু শিল্পোন্নয়ন কোনাে অবস্থাতেই সম্ভব হবে না যদি সেখানে বিদ্যুৎশক্তি পুরােমাত্রায় ব্যবহারের সুযােগ না থাকে। বিদ্যুৎ ব্যতীত কোনাে শিল্পকারখানা বা উৎপাদনশীল। কোনাে প্রতিষ্ঠান একদিনের জন্যও চলতে পারে না।

যেখানে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হবে সেখানে অগ্রগতি ও উন্নয়ন খুব সহজেই বাধাগ্রস্ত হবে। আধুনিক মানুষের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে জড়িয়ে আছে নিত্য প্রয়ােজনীয় শিল্পকারখানার ফসল। তাই আধুনিক শিল্প বিস্তারের এ যুগে বিদ্যুতের আবশ্যকতাকে সহজেই স্বীকৃতি দিতে হয়।

দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ রচনা । Essay on Science in everyday life
দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ রচনা । Essay on Science in everyday life

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ:

আধুনিক চিকিৎসা-বিজ্ঞান আজ বহুদূর পর্যন্ত তার উন্নতিকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। এক সময়ের কবিরাজনির্ভর চিকিৎসা ব্যবস্থা আজ বড়ই সেকেলে বলে বিবেচিত। বিভিন্ন দুরারােগ্য ব্যাধির কারণ ও শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর যে পরীক্ষাকরণ পদ্ধতি আছে তা বিদ্যুৎ ব্যতীত সম্ভব নয়। একটি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার বিদ্যুৎ ছাড়া অকল্পনীয়। এমনকি চিকিৎসাবিজ্ঞানের যে বড় অবদান ওষুধ উৎপাদন ও বিদ্যুৎ ব্যতীত অসম্ভব।

আধুনিক সভ্য জীবনে বিদ্যুৎ:

গােটা বিশ্ব আজ শিল্পবিপ্লবের স্রোতে ভাসমান। আধুনিক সভ্য জীবন পেতে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে মানুষ লড়ছে অবিরাম। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎশক্তির প্রভাব লক্ষ করা যায়। ছােট-বড় কলকারখানা ও যানবাহন থেকে শুরু করে নিভৃত গৃহকোণ সবই এখন বিদ্যুতের দখলে।

সভ্যতার বিশেষ অবদান অত্যাধুনিক ইন্টারনেট ও টেলিযােগাযােগ মাধ্যম কোনােটাই বিদ্যুৎশক্তির বাইরের কোনাে শক্তি দ্বারা পরিচালিত নয়। বিদ্যুতের অভাবে কর্মচঞল এলাকা মুহর্তেই হয়ে পড়ে স্থবির। একটানা বিদ্যুৎহীনতা গার্মেন্টস কারখানার শত-সহস্র শ্রমিককে করে দেয় বেকার। ফলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে পিছিয়ে পড়ে জাতীয় রপ্তানি আয়ের এ বিশেষ খাতটি।

যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানে জীবন অস্বাভাবিক, আর অস্বাভাবিক জীবন আধুনিক সভ্য জীবন হতে পারে না। তাই আধুনিক জীবন ও বিদ্যুৎ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

কৃষিক্ষেত্রে বিদ্যুৎ:

কৃষিকাজে বিদ্যুতের ব্যবহার কৃষি উৎপাদন বাড়ায়। কৃষির প্রায় সকল কাজেই সেচের প্রয়ােজন পড়ে। সেচ ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুতের ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে কৃষকের জন্য সাশ্রয়ী এবং অধিক ফলনও নিশ্চিত হয়। যেসব এলাকায় কৃষকরা বিদ্যুৎচালিত মােটরের সেচ সুবিধা পাচ্ছে সেসব এলাকায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে জাতীয় উৎপাদনও উর্ধ্বমুখী হচ্ছে।

দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ রচনা । Essay on Science in everyday life
দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ রচনা । Essay on Science in everyday life

জীবনকে গতিশীল করতে বিদ্যুৎ:

মানবজীবনকে গতিময়তা দান করেছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ মানুষের শ্রম ও সময়ের অপচয় হাজার গুণে কমিয়ে জীবনকে করেছে গতিশীল । শত হাতের কাজকে বিদ্যুতের একটি যন্ত্রই এখন সম্ভব করে তুলেছে। মানুষের দৈনন্দিন কাজের অন্যতম সহায়ক শক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বিদ্যুৎ। তাই মানুষ কর্মযজ্ঞের সঙ্গী হিসেবে বিদ্যুতের সহযােগিতাকে গ্রহণ করছে অকৃপণভাবে।

বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিড়ম্বনা (অপকারিতা):

বিদ্যুতের অপরিসীম অবদানকে স্বীকার করেই বলতে হয়, বিদ্যুতের বিড়ম্বনাও আছে। প্রতি বছরই বৈদ্যুতিক শক কেড়ে নেয় হাজার প্রাণ। বিদ্যুতের তার থেকেও বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। শিল্পকারখানায় বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার জন্যই কোটি কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হচ্ছে। তবে বিদ্যুতের এ আকস্মিক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তার অসীম অবদানের কাছে নিতান্তই অল্প। আমরা বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে দুর্ঘটনা বহুলাংশে রােধ করা সম্ভব।

উপসংহার:

বিদ্যুৎ ছাড়া উন্নত ও সভ্য জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। আধুনিক প্রযুক্তির সব ক্ষেত্রেই রয়েছে বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন অবদান। আর প্রযুক্তিবিহীন হলে কোনাে দেশের উন্নয়নও সম্ভব নয়।

দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ রচনা । Essay on Science in everyday life

 

বিদ্যুৎ সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান

বৈদ্যুতিক পাখা ধীরে ঘুরলে বিদ্যুৎ খরচ কেমন হয়?

উত্তর : একই হয়।

প্রশ্ন : সাধারণ বৈদ্যুতিক বাল্বে কোন গ্যাস ব্যবহৃত হয়?

উত্তর : নাইট্রোজেন।

প্রশ্ন : বিদ্যুৎকে কাজে লাগানোর জন্য কার অবদান বেশি?

উত্তর : বিজ্ঞানী ভোল্ট।

প্রশ্ন : শুষ্ক কোষে তড়িৎ চালক শক্তি কত?

উত্তর : ১.৫ ভোল্ট।

প্রশ্ন : বৈদ্যুতিক একক কী?

উত্তর : ওয়াট।

প্রশ্ন : বৈদ্যুতিক এক ইউনিট সমান?

উত্তর : এক কিলোওয়াট/আওয়ার।

প্রশ্ন : বিদ্যুৎ পরিবাহকের রোধের একক কী?

উত্তর : ওহম।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment