পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য রচনা: যারা আমাদের এই পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে, যথাযথ লালন পালনের মধ্য দিয়ে বড়ো করেছেন, যাদের স্নেহ, ভালোবাসা, শাসন আমাদের জীবনকে সঠিক মাত্রা দিয়েছে তারা আর কেউ না, তারা হলেন আমাদের মা-বাবা। সন্তানের প্রতি পিতামাতার অবদান অনস্বীকার্য। তাই পিতামাতার প্রতি প্রত্যেক সন্তানদেরও অনেক দায়িত্ব, কর্তব্য থাকে। এই নিয়েই আমাদের ছোটোদের জন্য আজকের উপস্থাপন পিতামাতার প্রতি কর্তব্য রচনা।
Table of Contents
পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য রচনা
ভূমিকাঃ
একটি শিশুর যখন জন্ম হয় তখন সে থাকে অনেক ছোট, আর অনেক বেশি অসহায় । সে হাঁটতে পারে না, কথা বলতে পারে না, নিজে নিজে খেতে পারে না । সে আসলে কিছুই পারে না । বাবা-মা এই ছোট্ট, অসহায় শিশুটিকে অনেক আদর-যত্ন করে বড় করে তোলেন । তাই মাবাবাই আমাদের সবচেয়ে আপনজন, সবচেয়ে প্রিয় মানুষ । আমরা আমাদের মা-বাবার কাছে চিরঋণী । মা বাবার ঋণ কখনোই শোধ করা যাবে না । তাই আমাদের উচিৎ মা বাবার প্রতি আমাদের কর্তব্য সঠিক ভাবে পালন করা ।
মাতা-পিতার অবদানঃ
একটি শিশু যখন মায়ের পেটে থাকে তখন মায়ের অনেক কষ্ট হয় । নয় মাস মায়ের পেটে থাকার পর শিশুটির যখন জন্ম হয় তখন মায়ের আরও বেশি কষ্ট হয় । মা-বাবা এই ছোট্ট অসহায় শিশুটিকে আদর-যত্ন করে বড় করে তোলেন । মা-বাবা কষ্ট করে টাকা উপার্জন করেন । আমাদের জন্য খাবার, কাপড়, বই-খাতা, ঔষধ, খেলনা কিনে দেন । মা আমাদের খাবার খাইয়ে দেন, গোসল করিয়ে দেন, কাপড় কেঁচে দেন, অসুখ হলে সারা রাত জেগে সেবা করেন । মা-বাবা আমাদের স্কুলে নিয়ে যান, লেখাপড়া শেখান, ভয় পেলে সান্ত্বনা দেন, আর অনেক অনেক আদর করেন ।
মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্যঃ
মা-বাবা আমাদের অনেক আদর করেন, যত্ন নেন । সে জন্য সন্তানদেরও উচিৎ মা-বাবার কথা শোনা, তাদের যত্ন নেয়া । লেখাপড়া করলে তারা খুব খুশি হন । তাই আমাদের উচিৎ ভালো ভাবে লেখা পড়া করা, বিভিন্ন কাজে যতটুকু পারি তাদেরকে সহযোগিতা করা । মা-বাবা যা করতে বলেন তা ভালো ভাবে করা উচিৎ । যা করতে নিষেধ করেন সেটা কখনোই করা উচিৎ না । এ সম্পর্কে মহানবী (স) বলেন –
“মা-বাবার সন্তুষ্টির উপর আল্লাহ্র সন্তুষ্টি নির্ভর করে । আর আল্লাহ্র অসন্তুষ্টিও মা-বাবার অসন্তুষ্টির উপর নির্ভর করে ”
অর্থাৎ, মা-বাবা খুশি হলে আল্লাহও খুশি হন । আর মা-বাবা সন্তানের উপর মন খারাপ করলে আল্লাহ্ও ঐ সন্তানের উপর মন খারাপ করেন ।
বিখ্যাত হিন্দু পণ্ডিত স্বামী বিবেকান্দ বলেন –
“মনে রাখবে, মা বাবা হচ্ছেন স্রষ্টার প্রতিরূপ । তাই যে কোন উপায়ে মা-বাবাকে খুশি রাখবে । মা-বাবা খুশি হলে স্রষ্টাও তোমার উপর খুশি হবেন ।”
খ্রিস্টান ধর্মে বলা হয়েছে –
“বাচ্চারা মা-বাবার কথা শোনো । তাদেরকে সম্মান করো । তাহলেই তোমাদের ভালো হবে । আর অনেক দিন বাঁচবে ।”
মহানবী (স) বলেছেন –
“মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত । ”
অর্থাৎ, যারা মায়ের সেবা করবে তারা বেহেস্তে যাবে ।
হিন্দু ধর্ম গ্রন্থে বলা হয়েছে –
“পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম”
অর্থাৎ, বাবার সেবা করলে অনেক পূর্ণ হবে, আর স্বর্গে যাওয়া যাবে ।
মা-বাবার সাথে সন্তানের আচরণঃ
মা-বাবার সাথে কখনোই খারাপ আচরণ করা উচিত না । আমরা কখনোই মা-বাবার সাথে বেয়াদবি করব না, তাদেরকে ধমক দিব না, তাদের সাথে রাগ করব না, উঁচু গলায় কথা বলব না । আমরা এমন কিছু করব না যাতে তাদের মন খারাপ হয় । পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ্ আদেশ দিয়েছেন –
“মা-বাবার সাথে ভালো ব্যাবহার করো । তাদেরকে ধমক দিবে না। তাদের সাথে ভদ্রভাবে কথা বলো ।”
[সূরা বনি ইসরাইলঃ ২৩-২৪]
স্বামী বিবেকান্দ বলেন –
“সে ছোট শিশুটি অনেক ভালো শিশু যে কখনই মা-বাবার সাথে কর্কশভাবে কথা বলে না ।”
সন্তানের আচরনে মা-বাবা কষ্ট পেলে আল্লাহ্ প্রচন্ড রাগ করেন । এ সম্পর্কে মহানবী (স) বলেছেন –
“মা-বাবকে কষ্ট দিলে সন্তানের গুনাহ আল্লাহ্ মাফ করেন না । তাকে তিনি পৃথিবীতেই নানা বিপদ দিয়ে শাস্তি দেন ।”
মা-বাবা ভুল করলে তাদের প্রতি কর্তব্যঃ
মা-বাবাও মানুষ । তারাও মাঝে মাঝে ভুল বা অন্যায় কাজ করতে পারেন । কিন্তু মা-বাবা সন্তানের জন্য এত কষ্ট করেন আর এত আদর করেন যে মা-বাবা কোন ভুল বা অন্যায় কাজ করলেও তাদের সাথে কখন কোন খারাপ আচরণ করা যাবে না । তখন তাদের ভদ্র ভাবে বুঝাতে হবে । অনেক সময় লজ্জা পেয়ে তারা সন্তানের কথা শুনতে চাইবেন না । তখন তারা যাদের কথা শোনেন (যেমনঃ শিক্ষক, দাদা-দাদি, নানা-নানি বা অন্য বড় কেউ) তাদেরকে দিয়ে বোঝাতে হবে ।
মা-বাবা কখনও কোন ভুল বা অন্যায় কাজ করতে বললে সেটা করা যাবে না । কিন্তু সে সময়ও তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না । তখনও তাদেরকে ভদ্র ভাবে বুঝাতে হবে ।
মা-বাবা সন্তানকে কখনও কষ্ট দিলেও মা-বাবাকে কষ্ট দেয়া যাবে না । মহানবী (স) বলেন –
“মা-বাবা সন্তানদের সাথে খারাপ ব্যবহার করলেও মা-বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না । বরং তাদেরকে সেবা করতে হবে ।”
বৃদ্ধ হলে মা-বাবার প্রতি কর্তব্যঃ
মা-বাবা বৃদ্ধ হলে তাদের যত্ন নেয়া উচিৎ । কখনোই বিরক্ত হওয়া উচিৎ না । আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলে বলেন যে–
মা বাবার সেবা করতে গিয়ে কখনও বিরক্ত হয়ে উহ্ শব্দটিও করা যাবে না ।
উপসংহারঃ
মা বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করলে আর তাদের কথা মত চললে আমরা জীবনে অনেক বড় হতে পারবো । তখন সবাই আমাদেরকে খুব ভালো বলবে । তাই আমাদের উচিৎ মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্যগুলো সঠিকভাবে পালন করা । তাহলে আমরাও একদিন বড় হব, জীবনে অনেক সুখ আর শান্তি পাব ।
আরও পড়ুনঃ