বৃক্ষরোপণ রচনাঃ বৃক্ষকে বলা হয় পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের পূর্বশর্ত। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই পৃথিবী। আর এই পৃথিবীকে সবুজ-শ্যামলা শস্য শ্যামলা করে তুলেছে হাজার হাজার বৃক্ষরাজি।এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে গাছপালার রয়েছে এক অনস্বীকার্য ভূমিকা। তাছাড়া আমাদের জীবনের বেশিরভাগ মৌলিক চাহিদাগুলোই পূরণ করে থাকে গাছপালা। কবির ভাষায়”দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য, লও এ নগর” – কবির সেই আকুতি আজকের এই যুগে অরণ্যে রোদন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ প্রতিনিয়ত মানুষ কেটে সাফ করছে বনজঙ্গল ও জনজীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করা খুবই জরুরি।
Table of Contents
বৃক্ষরোপণ রচনা
ভূমিকা
বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু। বৃক্ষ শুধু প্রাকৃতিক শোভাই বাড়ায় না, মাটির ক্ষয় রোধ করে, বন্যা প্রতিরোধ করে, ঝড় তুফানকে বাধা দিয়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে। আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণেও বৃক্ষের ভূমিকা অপরিসীম। বৃক্ষ ছাড়া পৃথিবী মরুভূমিতে পরিণত হতো। বৃক্ষ অক্সিজেন সরবরাহ করে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।
বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা
আমাদের জীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। । আমাদের জীবন ও জীবিকার জন্য গাছের প্রয়োজন অপরিহার্য। বৃক্ষ থেকে পাওয়া অক্সিজেন গ্রহণ করেই আমরা বেঁচে থাকি। বৃক্ষ আমাদের পরিবেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং অন্যতম বনজ সম্পদ। বৃক্ষের পাতা, ফল ও বীজ আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি। বৃক্ষ থেকে তন্তু আহরণ করে আমাদের পরিধেয় বস্ত্র প্রস্ত্তত করা হয়।গাছগুলি গ্রিনহাউস প্রভাব প্রতিরোধ করে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলে। বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত কাঠ দিয়ে আমাদের বাড়িঘর ও আসবাব তৈরি করা হয়। আমাদের অতি প্রয়োজনীয় লেখার সামগ্রী কাগজ ও পেনসিল বৃক্ষের কাঠ দিয়েই তৈরি করা হয়।
আমাদের রোগ নিরাময়ের ওষুধও এই বৃক্ষ থেকেই তৈরি করা হয়।
বৃক্ষরোপণ কেন প্রয়োজনীয়:
সভ্যতা আরও এগিয়ে নিতে এবং শিল্পের বিকাশ ও প্রসার ঘটাতে আমরা ক্রমাগত বন ধ্বংস করছি। এবং আমাদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে অধিক হারে গাছপালা কেটে ফেলছি। উন্নয়নশীল দেশগুলি প্রতিনিয়ত নিজেদের উন্নত দেশের নামের তালিকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, উন্নত দেশগুলি নিজেদের আরো উন্নতির চেষ্টা করছে। এবং এটি করতে গিয়ে সমস্ত চাপ প্রকৃতির উপর পড়ছে। বিশেষ করে বনে। ফলস্বরূপ, নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এবং এই সমস্ত সমস্যা রোধ করতে, আমাদের বনায়নের জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের যেসকল সমস্যার সমাধান করতে হবে তা হ’ল:
1.প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ:
২০০৭ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কার অর্জনকারী আমেরিকান রাজনীতিবিদ ‘Al Gore‘ প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে দোষারোপ করেছেন, জনবহুলতা এবং নির্বিচারে বনভূমি উজাড় করে মানুষ তাদের চাহিদা পূরণ করেছে। বন উজাড় করার কারণে আমরা বিভিন্ন ঝড়, খরা, নদীর ক্ষয়, স্বল্প বিরতিতে বন্যার মুখোমুখি হচ্ছি। উপকূলীয় সবুজ বেল্ট আমাদের দেশে উপকূলীয় বিপর্যয় রক্ষা করে। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধে আমাদের গাছ লাগানো দরকার।
2.বায়ু দূষণ রোধ:
গাছগুলি পরিবেশ থেকে ক্ষতিকারক কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন সরবরাহ করে।কিন্তু বন উজানের ফলে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। গাছের অভাবে পরিবেশ বায়ু দূষণের জন্য দায়ী অন্য সমস্ত উত্সকে শুদ্ধ করতে সক্ষম হয় না। যারফলে, বায়ু দূষণ এর কারণে মানুষ বিভিন্ন মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সুতরাং আমাদের এই বায়ু দূষণ এবং এর দ্বারা সৃষ্ট রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য পর্যাপ্ত বনায়ন করা প্রয়োজন।
3.গ্রিনহাউস প্রভাব প্রতিরোধ:
বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে এই গ্রিনহাউজ প্রভাবটির কারণে আর্কটিক মহাসাগর গলে যাবে এবং অদূর ভবিষ্যতে সমুদ্রের স্তর আরও বাড়বে। এবং যদি এটি আরও 1 মিটার বৃদ্ধি পায় তবে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ, বিশেষত মালদ্বীপ এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলি 10 ফুট পানির নীচে তলিয়ে যাবে। সুতরাং এ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের আরও বনায়ন করতে হবে।
ভূমি ক্ষয় রোধ: বন উজাড় করার ফলে মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পায় এবং খরা ও মরুভূমির কারণ হয়। সুতরাং মাটির ক্ষয় রোধে গাছ লাগানো খুব প্রয়োজন।
বৃক্ষ সংরক্ষণে করণীয়
দেশের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে বন ও বনজ সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন প্রকার শিল্পের উপকরণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সীমাহীন প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের বৃক্ষের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য।
আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণে অংশগ্রহণ করা। দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনার জন্য আমাদের প্রত্যেকের প্রতিবছর অন্তত দুটি করে বৃক্ষ রোপণ করা দরকার।
উপসংহার
বৃক্ষহীন পরিবেশ জীবন ও জীবিকার জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই এই সম্পদের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি পূরণের জন্য লাগামহীন বৃক্ষনিধন বন্ধ করা দরকার। পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ জোরদার করার প্রতি আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। ‘আসুন গাছ লাগাই, পরিবেশ বাঁচাই’—এ স্লোগানকে যদি আমরা মিলিতভাবে গ্রহণ করি ও কাজে লাগাই, তাহলে আমাদের বৃক্ষসম্পদ বৃদ্ধি পাবে এবং পরিবেশও সুন্দর হবে।
আরও দেখুনঃ