সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনা । Essay on Communal harmony । প্রতিবেদন রচনা

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মানুষকে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়। দৃষ্টিভঙ্গি উদার করে। মানুষকে ঐক্যে বিশ্বাস করতে শেখায়। নিজের ধর্মের প্রতি যেমন বিশ্বাস জোরালো করে তেমনি অন্যের ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা যাবে না এই বোধও তৈরি করে দেয়।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনা । Essay on Communal harmony

Competitive Exams Preparation Gurukul, GOLN Logo [ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি গুরুকুল, লোগো ]

ভূমিকাঃ

সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকে মানুষ একটি মাত্র সম্প্রদায় বা গোত্রের পরিচিত ছিল আর সে গোত্রটি নামই হল মানুষ। সেই কত শতাব্দী আগে বড়– চন্ডীদাস বলে গেছেন-

“সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।”

সত্যিকার অর্থেও মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো সে মানুষ; সৃষ্টির সেরা জীব। আমরা মানুষ যে যে বর্ণের বা ধর্মের হোক না কেন আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। তাহলেই দেশকে সামনের দিকে অগ্রসর নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

সাম্প্রদায়িকতা ও বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি:

বর্তমান বিশ্বের সাম্প্রদায়িকতার কালো ছায়ায় ঘটছে সবচেয়ে নিষ্ঠুর অমানবিক ঘটনাবলী। সাম্প্রদায়িকতার ফলে ঘটছে সভ্যতার চরম বিপর্যয়। দেশে দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর চলছে অমানবিক নির্যাতন। সংখ্যাগুরুরা তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য সংখ্যালঘুদের ওপর চালাচ্ছে অত্যাচারের স্টিম রোলার।

সাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বভ্রাতৃত্বের ধারণাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে। অথচ পৃথিবীর সব ধর্মেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু একথা এখন আর কেউ মানছে না। এই সাম্প্রদায়িকতার ফলেই হিটলার তার গ্যাস চেম্বারে লক্ষ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের মুসলিমরা প্রতিনিয়ত ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

মানবতার মুক্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি:

পৃথিবীতে হিন্দু, মুসলিম, বুদ্ধ, খ্রিষ্টান জৈন ধর্ম সহ অসংখ্য ধর্মের মানুষ বসবাস করে। আবার পেশার দিক দিয়েও বিভিন্ন পেশা ও বৃত্তিজীবী মানুষ সমাজে বসবাস করে। এদের মধ্যে আছে কামার,-কুমার, মুচি, ডোম, কুলি, মালি, সুইপার। এরই পাশাপাশি রয়েছে উচ্চবিত্ত ভদ্র মার্জিত শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর মানুষ। এসব শ্রেণীর মানুষরা এই একই সারিবদ্ধ হয়ে কাজ করার মধ্য দিয়ে বর্তমান বিশ্বের অগ্রগতির ধারা কে এগিয়ে নিতে পারে। লাঞ্ছিত মানবতা কে মুক্তি দিতে হলে চাই সব ধর্মের সব মতবাদের ও মানুষের এক হয়ে কাজ করার মানসিকতা।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনা । Essay on Communal harmony
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনা । Essay on Communal harmony

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিঃ

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বলতে এক সাথে একই সমাজে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সহাবস্থানকে বোঝায়। সেখানে সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে কোনো জাত্যভিমান থাকে না। কেউ কাউকে ছোট ভাবে না। কেউ কাউকে বড় ও ভাবে না। কেউ নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করে না। কেউ কাউকে শত্রু হিসেবে গণ্য করে না। একই সমাজ ও রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে সকলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রয়োজনীয়তাঃ

দেশ ও জাতি গঠনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অপরিহার্য একটি বিষয়। একটি দেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করতে পারে। কিন্তু তাদের মধ্যে যদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি না থাকে তাহলে তারা কখনোই একটি শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হতে পারে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির অভাবে সেই জাতির ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এতে করে সমাজ ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হলে সমাজ ব্যবস্থা অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। চারিদিকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

ফলে অনিবার্যভাবেই যুদ্ধ ও সংঘাত দেখা দেয়। মানুষে মানুষে আস্থার অভাব দেখা দেয়, অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়, সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার পথ বন্ধ হয়ে যায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি না থাকলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ফলে ব্যাপক প্রাণহানী ঘটে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস হয়। দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। এমন কি কখনো কখনো দেশের সার্বভৌমত্বও হুমকির মুখে পড়ে। শুধুমাত্র একটি দেশের ভেতরেই নয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি খুবই জরুরি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি না থাকলে গোটা বিশ্বই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনা । Essay on Communal harmony
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনা । Essay on Communal harmony

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিঃ

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক সাথে বাস করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান। আমরা বাঙালি জাতি, বাংলাদেশিরা খুব সচেতন ভাবেই বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হই। সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও সহযোগিতা আমাদের আদর্শ। পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থা আমাদের ধর্ম। ৫২, ৬৯, ৭০, ৭১-এ বাঙালি জাতি তাদের অসম্প্রদায়িক চেতনার স্বাক্ষর রেখেছে।

তাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আর একতাকে চিরভাস্বর করেছে। মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, খাসিয়া, সাঁওতাল নির্বিশেষে সকলে এক হয়ে যুদ্ধ করেছে। আমাদের প্রত্যেকটি উৎসবে বাঙালি জাতি এক হয়ে যায়। পহেলা বৈশাখ, ঈদ, পূজা, বড়দিন, বৌদ্ধপূর্ণিমা, বৈসাবি আর জাতীয় দিবসগুলোতে সাম্প্রদায়িক পরিচয় ভুলে এক জাতি হিসেবে সকলে সমান অংশগ্রহণ করে।

উপসংহার:

আমরা বলতে পারি বর্তমান বিশ্ব উন্নতি, অগ্রগতি ও উৎপাদনশীলতার বিশ্বাস করে। তাই আজ বিশ্ব জনমত যুদ্ধের বিপক্ষে, সন্ত্রাসের বিপক্ষে, সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে। অগ্রগতিশীল বিশ্বে অগ্রগতি ও উন্নতির ধারাকে গতিশীল করার জন্য প্রয়োজন বিশ্ব শান্তি বিশ্বভ্রাতিত্ব ও সম্প্রদায়িক সম্প্রতি প্রতিষ্ঠা।

আরও দেখুনঃ

 

Leave a Comment