আমার মা রচনা । Essay on My mother । প্রতিবেদন রচনা

আমার মা রচনার একটা নমুনা তৈরি করবো আজ আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য। মা সকলের জীবনেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ। মা এর হাত ধরেই প্রতিটি শিশু পৃথিবীর আলো দেখে থাকে। এমন কি বাবার সাথে পরিচয়ও মা এর মাধ্যমেই হয়ে থাকে। জীবনের সমস্ত দুঃখকষ্ট মোচনের সবচেয়ে বড় আশ্রয় হল মায়ের আঁচল।

আমার মা রচনা । Essay on My mother
আমার মা রচনা । Essay on My mother

আমার মা রচনা

ভূমিকা:

আমাদের সবার জীবনে সবচেয়ে কাছের এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষটির স্থান সে হল মা। মা প্রত্যেক সন্তানের কাছেই সবচেয়ে নিরাপদ এবং শান্তির আশ্রয়। আমরা আমাদের সুখ দুঃখ, অভাব অভিযোগ সব মায়ের কাছে জানাই।
বাবা যেমন বাড়ির বাইরের দিকটা সামলে পরিবারকে টেনে নিয়ে যান তেমনই মা ঘরের সমস্ত কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে পরিবারকে ভেতর থেকে পুষ্টি যোগান। মা শুধু আমারই নয়, সমগ্র পরিবারের ভালো-মন্দের খেয়াল রাখে। সেজন্য আমি আমার মাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসি।

আমার অনেক বন্ধুর মা আবার ঘরের কাজ করবার সঙ্গে সঙ্গে বাইরে চাকরি করেন। কিন্তু আমার মা আমাদের বড় পরিবারকে সারাদিন সামলে রাখতে রাখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মা আমাদের সবাই কে যেমন স্নেহ করে ও ভালোবাসে, তেমন আমরাও সবাই মাকে ভীষণ ভালোবাসি। সেই ভালোবাসা থেকেই আজ মায়ের বিষয়ে এই রচনা লিখছি।

 

মায়ের রোজকার জীবন:

আমার মা পুরোদস্তুর একজন গৃহকত্রী। বাড়িতে সবার আগে ঘুম ভাঙ্গে মায়ের। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে মা প্রথমে ঠাকুর পুজো করে। এরপর থেকে সারাদিন মায়ের কাটে প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যে। ঠাকুর পুজো করে মা রান্না ঘরে প্রবেশ করে। সেখানে প্রথমে বাবার এবং আমার জন্য সকালের খাবার বানায়।

তারপর আমি এবং বাবা ঘুম থেকে উঠলে আমাকে সকালের দুধ এবং বাবা, ঠাকুরমা এবং দাদুকে চা দিয়ে মা সেই সময়টুকু আমাদের সকলের সাথে খানিকক্ষণ গল্প করে। চা খাওয়া হয়ে গেলে আবার রান্নাঘরে ফিরে যায়। ইতিমধ্যে বাবা স্নান করে অফিসের জন্য তৈরি হন এবং আমি স্নান করবার পর মা আমাকে স্কুলে যাবার জন্য তৈরি করে দেন।

আমি এবং বাবা একসাথে মায়ের হাতে তৈরি খাবার খেয়ে স্কুলে চলে যাই। আমি ও বাবা বেরিয়ে যাবার পর মা রান্নাঘরের কাজ সেরে, আমাদের ঘর গোছগাছ করে খানিকক্ষণ বিশ্রাম করে নেয়।

আমার মা কাপড়ের ওপর খুব সুন্দর নকশা করতে পারেন। দুপুরবেলা খাওয়া-দাওয়ার পর মায়ের অবসর কাটে কাঁথা কিংবা কাপড়ের উপর নকশা করে। বিকেল বেলা মা আমাদের ছাদে বাগান পরিচর্যা করে আমি স্কুল থেকে ফিরে আসার পর আমায় খেতে দেয়। এরপর সন্ধ্যেবেলা বাবা ফিরে এলে সবাইকে চা জলখাবার করে দিয়ে আমার পড়াশোনায় সাহায্য করে। এইভাবে সারাদিনব্যাপী ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে মায়ের রোজকার জীবন কাটে।

আমার মা রচনা । Essay on My mother
আমার মা রচনা । Essay on My mother

 

আমার জীবনে মা:

সব ছেলেমেয়ের মতন আমার জীবনেরও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হল আমার মা। মাকে ছাড়া আমি একটি দিনও কল্পনা করতে পারিনা। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত সারাদিন আমার কাটে কোন না কোনভাবে মায়ের সান্নিধ্যে। মা আমায় সকালবেলা স্কুলের জন্য তৈরি করে টিফিনে রোজ কিছু-না-কিছু ভাল-মন্দ খাবার বানিয়ে দেয়।

তারপর বিকেলবেলা স্কুল থেকে ফিরে আসার পর আমি আমাদের ছাদের বাগান পরিচর্যায় মাকে সাহায্য করি। মা কখনো কখনো ছুটির দিনে দুপুরবেলা আমার সঙ্গে লুডো, দাবা কিংবা ক্যারাম খেলে। সন্ধ্যেবেলা যখন মা আমায় পড়াতে বসে তখন মাঝে মধ্যে কথা না শুনলে বকাঝকা করে বটে কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আদরে ভরিয়ে দেয়। তারপর রাত্রিবেলা মায়ের হাতে খাওয়া-দাওয়া করে মায়ের কাছে না শুলে আমার কোনদিন ঘুম আসেনা।

 

একটি স্মরণীয় ঘটনা:

একবার শীতকালের শুরুতে আমার মরশুমি জ্বর এসেছিল। সাথে প্রচন্ড হাঁচি ও কাশি হচ্ছিল। রাতের দিকে জ্বর বাড়তে বাড়তে থার্মোমিটারে ১০২ তাপমাত্রা উঠলো। আমার মনে আছে মা সেদিন রাতে সারারাত জেগে আমার মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিল।

সেদিন রাতে ওষুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে পরের দিন ভোর পর্যন্ত যতক্ষণ আমার জ্বর না কমেছে ততক্ষণ মা কোলে মাথা নিয়ে জেগে বসেছিল। আমার প্রতি মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসা আমায় সব সময় অভিভূত করে। রোজ সারাটা দিন মায়ের সান্নিধ্যে কাটালেও সেদিন রাতের কথা আমার সব সময় মনে থাকবে।

আমার মা রচনা । Essay on My mother
আমার মা রচনা । Essay on My mother

 

উপসংহার:

আমার সব বন্ধুরা জীবনে বিভিন্ন বড় বড় লোকের মতন হতে চায়। কেউ বলে জীবনে রবীন্দ্রনাথের মতন হবে, কেউ বলে নেতাজির মতন হবে। কিন্তু আমি আমার জীবনে আমার মায়ের মতন মানুষ হতে চাই। আমার মা যেভাবে আমাদের গোটা পরিবারকে এক সূত্রে বেঁধে রাখে আমি আমার জীবনে ভালবাসার সেই জাদুকাঠি অর্জন করতে চাই।

আমার কাছে আমার মা জীবনে দেখা সবচেয়ে আদর্শ মানুষ। আমার মা যেমন সব সময় সকলের ভালো চায় আর পরিবারের সেবা করে আমিও তেমন ভাবেই সারা জীবন আমার পরিবার আর বিশেষ করে আমার মায়ের সেবা করে যেতে চাই।

 

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment