গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রচনা । Essay on Green house Effect । প্রতিবেদন রচনা ও সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নোত্তর

গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রচনা: সাধারণভাবে ইংরেজি ‘Green House’ অর্থ ‘সবুজ ঘর’ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশসমূহে এবং মেরু অঞ্চলের তীব্র শীতপ্রবণ এলাকায় বছরের একটি দীর্ঘ সময় সূর্যের অনুপস্থিতি থাকে। এ সময় মানুষের নিত্যপ্রয়ােজনীয় শাকসবজির সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করে। এ অবস্থায় পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞানীগণ বিশেষ ধরনের কাচের ঘর উদ্ভাবন করে। এ ঘরের ছাদ ও দেয়াল তাপ বিকিরণরােধী বিশেষ ধরনের কাঁচ দিয়ে তৈরি।

গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রচনা

গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রচনা । Essay on Green house Effect
গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রচনা । Essay on Green house Effect

ভূমিকা :

মানব সভ্যতার অগ্রগতির প্রেক্ষিতে যার অবদানকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা যায় তা হলাে বিজ্ঞান। বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানের বিস্ময়করণ অবদানে মানব জাতি একদিকে যেমন সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ভােগ করছে, অন্যদিকে তার ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে এক ভয়াবহ সর্বনাশের দিকে।

বিজ্ঞানের আশীর্বাদে প্রাকৃতিক শক্তির ব্যাপক বৈচিত্র্যময় ব্যবহারের পরিণামে বিশ্বের প্রকৃতি ও তার পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়া শুরু হয়েছে। এই ভারসাম্যহীনতার ফলে পৃথিবী নামক গ্রহটির সামনে এগিয়ে আসছে চরম দুর্দিন। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন গ্রিনহাউস ইফেক্ট।

মূলত গ্রিনহাউস ইফেক্ট পরিবেশ দূষণেরই একটি বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া, যা বিশ্ববাসীকে নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়েছে। বলাবাহুল্য, এর জন্য দায়ী মানুষ নিজেই। বিশ্ব স্রষ্টার নিখুঁত ও ভারসাম্যপূর্ণ প্রকৃতিকে মানুষ। তার অবিমৃশ্যকারিতাপূর্ণ কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। প্রকৃতি হারিয়েছে তার ভারসাম্য, স্বাভাবিক গতি ও অনুকূল পরিবেশ।

গ্রিনহাউস ইফেক্ট :

পৃথিবীকে ঘিরে এর চারপাশে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০ কি.মি. উর্ধ্বে ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত কম। এখানে রয়েছে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অপর কয়েকটি গ্যাসের এক বেষ্টনী। গ্যাসগুলাে সমষ্টিগতভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস বলা হয়। এটি রাসায়নিক পর্দা হিসেবে কাজ করে।

গ্রিন হাউসের কাঁচের দেয়াল যেভাবে তার ভেতরের উষ্ণতাকে বাইরে বিকিরণ হতে বাধার সৃষ্টি করে, ঠিক তেমনিভাবে বায়ুমণ্ডলে সুষ্ট রাসায়নিক পর্দা বা গ্যাসের দেয়া ভূপৃষ্ঠের শােষিত তাপের বিকিরণ ঘটাতে বাধা দেয়। গ্যাসের এ দেয়াল আছে বলেই কিছু পরিমাণ তাপ বাধা পেয়ে পৃথিবীতেই থেকে যায় এবং এর প্রভাবে বায়ুমণ্ডল উষ্ণ থাকে।

ফলশ্রুতিতে পৃথিবীতে যে উষ্ণতা থাকে তা জীবের বাসযােগ্য হয়। জীবের বসবাসের অনুকূল এ রূপ পরিস্থিতিকে বলা হয় গ্রিনহাউস ইফেক্ট।

গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রচনা । Essay on Green house Effect
গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রচনা । Essay on Green house Effect

গ্রিনহাউস গ্যাস :

গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিকারী গ্যাসগুলােই মূলত গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। পূর্বে গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টির ক্ষেত্রে মূলত কার্বন ডাই অক্সাইডকে দায়ী করা হলেও, বর্তমানে জানা গেছে, পুরাে সমস্যার ৫০% এর জন্য দায়ী কার্বন ডাই অক্সাইড এবং বাকি অর্ধেকের জন্য দায়ী অন্যান্য গ্যাসগুলাে যেমন- মিথেন ১৯%, সিএফসি ১৭%, ওজোন ৮%, নাইট্রাস অক্সাইড ৪% এবং জলীয় বাষ্প ২%।

এসব গ্রিনহাউস গ্যাস যদি হঠাৎ বায়ুমণ্ডল থেকে উধাও হয়ে যায়, তবে পৃথিবী রাতারাতি পরিণত হবে প্রাণহীন শীতল গৃহে। ফলে ডাইনােসরদের মতাে অতিকায় প্রজাতির বিলুপ্তির মতাে মানবজাতির ঘটবে করুণ বিলুপ্তি।

তাই এ সকল গ্যাসের পরিমিত উপস্তিতি, পৃথিবীর স্বাভাবিক ও অনুকূল অস্তিত্বের জন্য খুব জরুরি। তবে লক্ষণীয় যে, শিল্প বিপ্লব শুরু হওয়ার পর থেকে বহু শিল্প কারখানা এবং যানবাহনের নির্গত ধোঁয়া থেকে এ জাতীয় গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বায়ুমণ্ডলে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে।

গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রচনা । Essay on Green house Effect

গ্রিনহাউস ইফেক্টের কারণ ও প্রক্রিয়া :

পৃথিবীকে বেষ্টনকারী আবহাওয়ামণ্ডলের কারণে এ ধরাধাম প্রাণ ধারনের উপযােগী হয়েছে। মহাশূন্যের আবহাওয়ামণ্ডলে ‘ওজোনস্তর’ নামে অদৃশ্য একটি বেষ্টনী বিদ্যমান। এ ওজোন স্তর পৃথিবীতে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি প্রবেশ রােধ করে এবং বিকিরণ প্রক্রিয়ায় পৃথিবী থেকে আসা তাপ মহাশূন্যে।

পূনরায় ফিরে যেতে সহায়তা করে। বিশ্ববাসীরই নানা কর্মকাণ্ডে প্রকৃতি প্রদত্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী ওজোন স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। গৃহস্থালি পণ্য ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশনার, বিভিন্ন ধরনের স্প্রে ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয় ক্লোরােফ্লোরাে কার্বন (সিএফসি) গ্যাস। এটা শিল্পকারখানাতেও ব্যবহৃত হয়। অবমুক্ত সিএফসি মহাশূন্যের ওজোন স্তর ক্ষয়কালীন অন্যতম উপাদান।

তাছাড়া গৃহস্থালি ও শিল্পবর্জ্য, কলকারখানা ও যানবাহনের ধোঁয়া, মানুষের মলমূত্র প্রভৃতি থেকে ক্রমবর্ধমান হারে নির্গত হচ্ছে কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন প্রভৃতি গ্যাস। এগুলাে বায়ুমণ্ডলে মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে ইনফ্লায়েড রেডিয়েশনে ব্যাঘাত ঘটায় এবং সূর্য।

থেকে আগত কিছু তাপ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ধরে রাখে। এভাবে একদিকে ওজোন স্তরের ক্ষয়জনিত কারণে মাত্রাতিরিক্ত অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে পৌঁছাচ্ছে, অন্যদিকে বায়ুমণ্ডলে প্রতিদিন সঞ্চিত হচ্ছে উত্তাপ। ফলে পৃথিবী হয়ে উঠছে উত্তপ্ত।

অপরদিকে, পৃথিবী থেকে বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ার ফলে বৃক্ষ কর্তক কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণের হারও কমছে। সামগ্রিকভাবে পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার ফলেও ঘটছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়।

গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রচনা । প্রতিবেদন রচনা
গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রচনা । প্রতিবেদন রচনা

গ্রিনহাউস ইফেক্টের ফলাফল :

গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার কুফল গােটা বিশ্ববাসীর জন্যই মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনছে। এটা প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে, বস্তুসংস্থান করছে বিপর্যস্ত। পৃথিবীর স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১.৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর কারণে তা এখন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ এ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ইতােমধ্যে উচ্চ তাপের কারণে মেরু অঞ্চলে কোটি কোটি বছর ধরে সঞ্চিত থাকা কোটি কোটি টন বরফ গলতে শুরু করেছে। পর্বতশৃঙ্গের বরফরামিও গলছে। বরফ গলা এ পানি নেমে আসছে সমুদ্রে।

এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ, মালদ্বীপ প্রভৃতি দেশের মতাে সমতল দেশগুলাের বিশাল অঞ্চল পানির নিচে চিরতরে তলিয়ে যাবে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ত্বক ক্যান্সারসহ মানুষকে ভােগ করতে হবে জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা।

প্রচণ্ড উত্তাপের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন বনাঞ্চলে দাবানল সৃষ্টি হবে। সমুদ্রের স্রোত পরিবর্তিত হবে। সবুজ শ্যামল বিভিন্ন দেশে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। অতি বন্যা, খরা, এসিড বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলােচ্ছাস পৃথিবীবাসীকে বিপন্ন করে তুলবে। ধবংস হবে জীববৈচিত্র্য। ভেঙে পড়বে কাদ্যশৃঙ্খল। এভাবে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া বিশ্বকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করবে।

গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রচনা । Essay on Green house Effect
গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রচনা । Essay on Green house Effect

বাংলাদেশে গ্রিনহাউস ইফেক্টের প্রভাব :

বাংলাদেশে গ্রিনহাউস ইফেক্টের ক্ষতিকর প্রভাবগুলাে নিচে চিহ্নিত করা হলাে:

১. ভূপৃষ্ঠের নিচু এলাকায় প্লাবন:

পৃথিবীর উত্তাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করবে। এর ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে। এতে সমুদ্রের অনেক দ্বীপ, উপকূলীয় অঞ্চল, সমুদ্র উপকূলের দেশ ও শহর পানিতে ডুবে যাবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলই বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাবে। এর ফলে অনেক জীবন এবং জীববসতি বিপন্ন হবে।

২. প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি:

সুন্দরবন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বনভূমি। এ বনে কাঠ, বেত, মধু, মােমসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস। এটা শিল্পের কাঁচামালেরও উৎস। এখানে আছে জীববৈচিত্র্য ও দুর্লভ প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণী, আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। পরিবেশ ও ভূবিজ্ঞানীদের অভিমত, সমুদ্রের পানির উচ্চতা মাত্র ১ মিটার বা ৩.৩৩ ফুট বৃদ্ধি পেলে সুন্দরবনের ৭০ ভাগ তলিয়ে যাবে।

৩. লবণাক্ততার বিস্তার:

সমুদ্রস্ফীতির কারণে খুলনা, বাগেরহাট, পিরােজপুর, লক্ষ্মীপুর, নােয়াখালী, পটুয়াখালী, বরগুনা প্রভৃতি জেলার আবাদি জমিতে সহজেই লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ঘটবে। ফলে এসব।

জেলার আবাদি জমি কৃষিকাজের অনুপযােগী হয়ে পড়বে। মানুষের ব্যবহার্য মিষ্টি পানির উৎস হারিয়ে যাবে। বিলুপ্ত হবে স্বাদু পানির প্রচলিত মৎস্য সম্পদ। এভাবে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া আমাদের দেশের কৃষি তথা বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন জীবিকার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

৪. বন্যা ঝড় জলােচ্ছাস:

গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে সাগর উত্তাল হয়ে উঠছে। নিম্নচাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে এর ফলে অতি বন্যা ও দীর্ঘমেয়াদি বন্যা, সামুদ্রিক জলােচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রাদুর্ভাব ঘন ঘন দেখা দেবে। গত দেড় দশকে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার মুখােমুখি হয়েছে। ১৯৮৮ সালের দুমাসব্যাপী বন্যায় দেশের ৫৩টি জেলাই প্লাবিত হয়েছিল।

১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে দেখা দিয়েছিল ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি। বন্যা, যা তিন মাস স্থায়ী হয়েছিল। ২০০৪ সালের বন্যা অন্য যে কোনাে সময়ের চেয়ে মারাত্মক রূপ ধারণ করেছিল। ১৯৯১ সালে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনেছিল ভয়াবহ জলােচ্ছ্বাস।

আমাদের দেশের অধিকাংশ বৃহৎ নদনদীর উৎস হিমালয় ও তৎসংলগ্ন এলাকা। হিমালয়ের বরফ গলা পানির তীব্র স্রোত বাংলাদেশকে প্লাবিত করার সময় বহন করে আনছে প্রচুর মাটি, যা নদীর তলদেশ ভরাট করে তুলছে। এর ফলে নদনদীর জলধারণ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে এবং আবাদি জমি প্লাবিত হচ্ছে।

৫. আবহাওয়াগত বিপর্যয়:

আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এর বিশাল এলাকা ভবিষ্যতে অনুর্বর নিষ্ফলা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চিরাচরিত ঋতুচক্র ভেঙে যাচ্ছে, দেখা দিয়েছে। অতি শীত এবং অতি গ্রীষ্মের দাপট। গ্রীষ্মকালে শীত এবং শীতকালে অকাল বন্যারও প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ক্রমশ নাতিশীতােষ্ণমণ্ডলের এ দেশটিতে আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে, যা কৃষিসহ দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

৬. মরুভূমির বৈশিষ্ট্য:

গ্রিনহাউস ইফেক্ট ভূপৃষ্ঠের তাপ বৃদ্ধি পেলে মাটিতে পানির পরিমাণ কমে যাবে। ফলে সমগ্র ভূমি মরুভূমিতে পরিণত হবে। আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে ইতিমধ্যে মরুভূমির বৈশিষ্ট্য দেখা দিয়েছে। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে।

৭. এসিড বৃষ্টি:

গ্রিনহাউস ইফেক্টের ফলে আবহাওয়ামণ্ডলে বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। এসব ক্ষতিকর অক্সাইডসমূহ বৃষ্টির পানির সাথে এসিড বৃষ্টি হিসেবে ভূপৃষ্ঠে পড়বে এবং ভূপৃষ্ঠের উর্বরতা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাবে এবং বনাঞ্চলে এসিড বৃষ্টি হলে বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাবে।

গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রচনা । Essay on Green house Effect
গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রচনা । Essay on Green house Effect

গ্রিনহাউস ইফেক্ট রােধে আমাদের করণীয়

গ্রিনহাউস ইফেক্ট একটি বৈশ্বিক সংকট। বাংলাদেশে এ প্রতিক্রিয়ার অসহায় শিকার। ভৌগােলিক অবস্থান। ও ভূ প্রাকৃতিক অবকাঠামাে বাংলাদেশকে এ সংকটের যতখানি কুফলভােগী করছে, সংকট সৃষ্টিতে আমাদের দেশের ভূমিকা তারচেয়ে নগণ্যই বটে।

গ্রিনহাউস ইফেক্টের ভয়ঙ্কর প্রভাব থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হলে নিচের বিষয়গুলাের দিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে:
যেসব গ্যাস ভূমণ্ডলের উত্তাপ বাড়ায়, তাদের নির্গমন কমাতে হবে।
জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। যেমন:

ক. অযথা ঘরের বাতি জ্বালিয়ে না রাখা।
খ. রান্নার সময়টুকু ছাড়া গ্যাসের চুলা বন্ধ রাখতে হবে।
গ. উন্নত চুলা ব্যবহার করলে জ্বালানি খরচ কমবে, গ্যাস নির্গমন হ্রাস পাবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে চাষাবাদ পদ্ধতির পরিবর্তন সাধন করতে হবে।বনায়ন বাড়াতে হবে। কারণ গাছ ক্ষতিকর গ্যাস শােষণ করে থাকে। গাছ অক্সিজেন দিয়ে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।

শিল্প কারখানায় যতটা সম্ভব জ্বালানি সাশ্রয় করতে হবে। পঁচাডােবা ও মজাপুকুর সংরক্ষণ করে মাছ চাষ করতে হবে। কারণ পঁচা পানিতে ক্ষতিকর গ্যাস উৎপন্ন হয়। সর্বোপরি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সকলকে মানিয়ে নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

উপসংহার :

পরিবেশ মানব সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সভ্যতার ক্রমবিকাশ থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছে তার পরিবেশ। মানুষের রচিত পরিবেশ তারই সভ্যতার বিবর্তন ফসল। মানুষ নিজের প্রয়ােজনে। প্রকৃতিকে যেমন কাজে লাগাচ্ছে বা প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করছে, প্রকৃতিও তেমনি ছিন্ন ভিন্ন আহত রূপ নিয়ে মানুষের তথা সমগ্র প্রাণপুঞ্জের ঠিক সমপরিমাণ বিরােধিতা করতে তৎপর।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানের বিজয় গৌরবে মানুষ পৃথিবীর পরিবেশকে বিষাক্ত করেছে। আজও করছে। ছড়িয়ে দিয়েছে। ক্ষতিকর সব আবর্জনা। তার ফল হয়েছে বিষময়। পরিবেশ দূষিত হয়েছে। আর দূষিত পরিবেশ প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। তাই গােটা জীবজগতের অস্তিত্বই আজ বিপন্ন।

একবিংশ শতাব্দীর সন্ধিক্ষণে মানবজাতি যখন সভ্যতার চরম শিখরে, ঠিক তখনই পরিবেশ আমাদের ঠেলে দিচ্ছে মহাবিপর্যয়ের দিকে। পরিবেশে দেখা দিয়েছে ‘গ্রিনহাউস ইফেক্ট’। বিশ্বব্যাপী এ নিয়ে চিন্তা ভাবনার অন্ত নেই। পরিবেশের এই বিপর্যয়ের জন্য মূলত আমরাই দায়ী।

গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন : গ্রিণ হাউজ কী?

উত্তর : কাচের তৈরি ঘর

প্রশ্ন : গ্রিনহাউস ইফেক্ট কথাটি প্রথম (১৮৯৬) ব্যবহার করেন—

উত্তর : সুইডিশ রসায়নবিদ সােভনটে আরহেনিয়াস।

প্রশ্ন : নিচের কোন গ্যাসটি বায়ুমণ্ডলে গ্রীনহাউস প্রভাবের জন্য দায়ি ?

উত্তর : কার্বন ডাই অক্সাইড

প্রশ্ন : গ্রিনহাউস ইফেক্ট কি ?

উত্তর : একটি বৈশ্বিক সংকট

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment