বাংলাদেশের ফল রচনা: বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের উষ্ণমণ্ডলীয় ও উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় ফল পাওয়া যায়।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি আমাদের এ বাংলাদেশ। বছরে ছয়টি ঋতু পালাক্রমে প্রকৃতিকে আপন মনে সজ্জিতকরে। আবার সে সঙ্গে উপহারও দেয় রূপ, রস ও গন্ধে ভরা সুস্বাদু ফল।
Table of Contents
বাংলাদেশের ফল রচনা
ভূমিকা :
পরম করুণাময় মহান আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন মানুষকে। আর সৃষ্টি করেছেন মানুষের যাবতীয় প্রয়োজনীয় সামগ্রী।ফল তার মধ্যে অন্যতম। সৃষ্টির প্রথমে মানুষ ফল খেয়েই জীবন ধারণ করত। এখনে অনেক দেশ আছে যেখানে ফলই প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে ফল প্রধান খাদ্য না হলেও মানুষের পুষ্টি সাধনের অনেকখানি দায়িত্ব পালন করে।
শ্রেণীবিভাগ:
বাংলাদেশ মৌসুমী জলবায়ুর অন্তর্গত। জলবায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন ঋতুর আবির্ভাব ঘটে।আর ঋতুর উপর ভিত্তি করে মাটির গুণাগুণ এর জন্য একেক জায়গায় একেক রকম ফল জন্মে থাকে।যেমন গ্রীষ্মকালের ফল, বর্ষাকালের ফল, শরৎ ও হেমন্তকালের ফল,শীতকালের ফল ও বসন্তকালের ফল।
১. গ্রীষ্মকালের ফল:
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ।ঋতু বৈচিত্রের পালায় প্রথমে আসে গ্রীষ্ম। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে জনজীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ।তখন মাঠ–ঘাট তৃণশুন।খাল–বিল পানিশূন্য আর বাতাস উষ্। একটু শীতল ছায়ায় ঠান্ডা পানির জন্য মানুষ পশু–পাখি সবাই ছটফটকরতে থাকে। গ্রীষ্ম কালীন সেসময় নানারকম রসালো সুস্বাদু ফলের প্রকৃতি তার উপহারের ডালি আমাদের সামনে এগিয়ে দিয়ে আমাদের সব ক্লান্তি দূর করে দেয়। গ্রীষ্মকালে জাম ,কাঁঠাল, লিচু,জামরুল প্রভৃতি ফল পাওয়া যায়।
কোথায় পাওয়া যায়:
ফজলি,গোপালভোগ, মোহনভোগ ইত্যাদি উন্নত জাতের আম রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জন্মে।কাঁঠালবাংলাদেশের জাতীয় ফল। টি একটি সুষ্ঠু ও রসালো ফল। এ দেশের প্রায় সব এলাকাতেই কাঁঠাল গাছ আছে। তবে পার্বত্যচট্টগ্রাম,সিলেট, কুমিল্লা,নর্সিংদি, গাজীপুর ঢাকায় প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। লিচু একপ্রকার রসালো ফল। এটি দিনাজপুরে বেশি উৎপন্ন হয়। জামও একটি রসালো ফল।এটি প্রায় সারা দেশেই জন্মে।
২. বর্ষাকালের ফল:
গ্রীষ্ম কাল শেষ হতেই আরেকটি ঋতুর যেন সয় না, কখন তার হাতের ডালা সাজিয়ে ধরবে আমাদের কাছে। শ্রাবণের বর্ষণে ঘরথেকে যখন বের হওয়া যায়না। রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয় পরে।অনেক সময় বন্যায় ক্ষেতের ফসল ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যায়।
মানুষের দুঃখের শেষ থাকে না। তবুও এসময় আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয় পেয়ারা,আনারস, আমড়া,বাতাবি লেবু প্রভৃতি ফল।
কোথায় কোথায় জন্মে:
পেয়ারা একটি উৎকৃষ্ট সুস্বাদু ফল। সব এলাকাতে এটি জন্মে।তবে উন্নত জাতের পেয়ারা বরিশালের জন্মে। পেয়ারা বিভিন্ন রকমের হয়। এক ধরনের পেয়ারা আছে যারা ভেতরটা লাল রঙের,এগুলো জাতে ছোট হয়।আবার সাধারন যে পেয়ারা সেটি ভেতরে সাদাই হয়। অন্য একটি পেয়ারা হলো কাজী পেয়ারা। এটি খুব বড়ো হয়। আনারস একটি রসালো ফল। এটি সিলেট জেলার পাহাড়ে জন্মে।এছাড়াও মধুপুর গড় ও পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর আনারস জন্মে। আমড়া একটি মুখরোচক ফল। এটিবরিশালে বেশি জন্মে।বাতাবি লেবু ও লটকন প্রায় সারা দেশেই জন্মে।
৩. শরৎ ও হেমন্তকালের ফল:
বর্ষার পরেই প্রকৃতিতে প্রকাশ পায় শান্ত স্নিগ্ধ মধুর শরৎ ও হেমন্ত ঋতু।এ ঋতু দুটির উল্লেখযোগ্যহচ্ছে তাল,কদবেল, শরিফা এছাড়াও আমলকি এবং ডালিম ও পাওয়া যায়।
কোথায় জন্মে:
তাল, আমলকী, ডালিম, শরিফা প্রায় সারা দেশে পাওয়া যায়।
৪.শীতকালের ফল:
হেমন্তের অবসানে শীতের আবির্ভাব হয়। শীতকালে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এসময় রোগবালাই কম হয়। নতুন শাকসবজি সকলকেআনন্দ দেয় ।এসময় পাওয়া যায় কমলা, কুল ,জলপাই,সফেদা ফল ও ছালটা প্রবিতি ফল।
কোথায় জন্মে:
কমলা বেশি জন্মে সিলেটে, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে কমলা চাষ হচ্ছে। কুলও জলপাই প্রায় সারা দেশে জন্মে।
৫.বসন্তকালের ফল:
সব ঋতুর শেষে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। শীতের শীতল প্রকৃতি বসন্তের জাদুময় স্পর্শে হয়ে উঠে প্রাণবন্ত। এ সময় আম, জামপ্রভৃতি গাছ মুকুলিত হয় এবং মুকুট এর গন্ধে মৌমাছি ছুটে আসে। এসময় পাতার আড়ালে থেকে কোকিলের সুমধুর ডাক শোনাযায়।তখন চারদিকে বসন্তের জয় ধ্বনি তবে বসন্ত যতটা শোভাময় ততোটা ফলবন্ত নয়।এ সময়ের মধ্যে বেল, তরমুজ বাঙ্গিপ্রভৃতি প্রদান।
কোথায় জন্মে:
বেল প্রায় সারা দেশেই জন্মে । তরমুজ বেশি জন্মে রাজশাহী ও যশোর অঞ্চলে । ফুটি ও বাঙ্গি বেশি জন্মে কুমিল্লা অঞ্চলে।
সারা বছরের ফল :
পেঁপে , ডাব , নারিকেল , কলা প্রভৃতি ফল প্রায় সারা বছর পাওয়া যায় । পেঁপে খুব উপাদেয় ফল । এটি রোগীর পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় । কাঁচা পেঁপে তরকারি হিসেবে খাওয়া যায় ।
ফলের উপকারিতা:
বাংলাদেশের বিভিন্ন ঋতুতে উৎপন্ন ফলমূল আমাদের নানাভাবে উপকার করে থাকে । রসালো ফল হিসেবে আম প্রত্যেক বাঙালির প্রিয় খাদ্য । কাঁচা আম থেকে আচার , মোরব্বা , চাটনি এবং পাকা আম থেকে জেলী , আমসত্ত্ব ইত্যাদি তৈরি করা যায়। জাতীয় ফল কাঁঠালের কোষগুলো যেমন সুস্বাধু ও রসালো , তেমনি বিচিগুলো তরকারি হিসেবে খুবই উপাদেয় । লিচু উচ্চভিটামিনযুক্ত ফল । লিচু থেকে চাটনি ও মোরব্বা তৈরি করা যায় । এছাড়া পেয়ারা , আমড়া , আমলকি , কমলা , বাতাবিলেবু , কুল প্রভৃতি ফলমূল আমাদের দেহের জন্য খুবই উপকারি । এসব ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে ।
উপসংহার:
প্রকৃতির উদায় ও অকৃপণ দানে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি চির ধন্য । আমাদের দেশে বিভিন্ন ঋতুতে পাওয়া যায় নানা রকম ফল ।কিন্তু দুঃখের বিষয় , প্রকৃতির অকৃপণ দান সত্ত্বেও আমাদের দেশের মানুষ ফলের চাষে তেমন মনোযোগী নয় । আমাদের দেশের মানুষকে ফলের চাষে মনোযোগী হতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে ফলের উৎপাদন বাড়াতে হবে ।
বাংলাদেশের ফল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন – কোন ফলকে ফলের রাজা বলা হয় ?
উত্তর: আমকে ।
প্রশ্ন – কয়েকটি গ্রীষ্মকালীন ফলের নাম বল ?
উত্তর: আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, বাতাবি লেবু, বেল, তাল ইত্যাদি ।
প্রশ্ন – কয়েকটি বর্ষাকালিন ফলের নাম বল ?
উত্তর: তাল, পেয়ারা, জাম্বুরা, আমড়া, জামরুল ইত্যাদি ।
প্রশ্ন – কয়েকটি শীতকালীন ফলের নাম বল ?
উত্তর: কমলা, বরই, তেতুল, জলপাই, কমলা লেবু ইত্যাদি ।
প্রশ্ন – কয়েকটি রসালো ফলের নাম বল ?
উত্তর: আম, কাঁঠাল, আনারস, তরমুজ, কমলা, লিচু ইত্যাদি ।
প্রশ্ন – কোন কোন ফল সারা বছর পাওয়া যায় ?
উত্তর: পেঁপে, কলা, লেবু, ডালিম ও নারিকেল ।
প্রশ্ন – কয়েকটি মিষ্টি ফলের নাম বল ?
উত্তর: আম, কাঁঠাল, আনারস, পেঁপে, আপেল ইত্যাদি ।
প্রশ্ন – ভিটামিন ‘সি’ আছে এমন কয়েকটি ফলের নাম বল ?
উত্তর: পেয়ারা, লেবু, টমেটো, আমড়া, কামরাঙ্গা ইত্যাদি ।
আরও পড়ুনঃ
- বাংলাদেশের খেলাধুলা রচনা । Essay on Sports of Bangladesh । প্রতিবেদন রচনা ও সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নোত্তর
- ফল