শৃঙ্খলাবোধ প্রবন্ধ রচনা: মানুষ দৈনন্দিন জীবনে নিয়মের অনুবর্তী হয়ে যে কাজ সম্পাদন করে তাই শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতা। আর শৃঙ্খলাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ এবং চর্চার মধ্য দিয়েই জন্ম হয় শৃঙ্খলাবােধের।
Table of Contents
শৃঙ্খলাবোধ প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা:
শৃঙ্খলাবােধ মানবজীবনের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য, যা জীবনের সবকিছুকেই সার্থক করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে শৃঙ্খলাবোধ বয়ে আনে শান্তিময় স্বাভাবিক জীবন ।
শৃঙ্খলা কী:
নিয়ম-কানুনের প্রতি আন্তরিক আনুগত্য এবং তা অনুসরণ করাই শৃঙ্খলা । শৃঙ্খলা এবং শৃঙ্খলাবােধ শুধু রাষ্ট্রীয় কিছু বিধি নিষেধকে গ্রহণ বা বর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রেই অলিখিত কিছু রীতি আছে যা মানুষকে মেনে চলতে হয়।
জগতের সকল কাজের সাথেই শৃঙ্খলা জড়িত এমনকি বিশ্বজগতের বিস্তৃত প্রকৃতির মধ্যেও শৃঙ্খলার বিষয়টি স্পষ্ট। ঘরে, বাইরে, রাষ্ট্রে ও প্রকৃতিতে যেখানেই শৃঙ্খলার ব্যতিক্রম হয়েছে সেখানেই বিপর্যয় ঘটেছে। শৃঙ্খলাবােধ মানুষের আনুগত্যের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ ।
শৃঙ্খলা ও প্রকৃতি:
বিশ্ব প্রকৃতির সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বিদ্যমান। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ তারা স্বকিছুই চলছে নিয়মের মধ্য দিয়ে। পৃথিবী তার কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান এমনিভাবে নিয়মকে অনুসরণ করছে অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র। পাহাড় বেয়ে ঝরনা নামে, ঝরনা মিলিত হয় নদীতে আর নদী ছােটে সমুদ্রের পানে এর মধ্যেও আছে প্রকৃতির চিরকালীন নিয়ম । নদীর জলে জোয়ার আসে, আসে ভাটাও।
বর্ষা আসে, শীত আসে, আসে বসন্ত। পৃথিবী আঁধার করা অমাবশ্যা কালাে পর্দা টেনে দেয় জগৎ-সংসারে। দুনিয়ার সবকিছুকে যেন আড়াল করে দেয়। আবার পূর্ণিমা আসে। কোমল আলােয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে গােটা জগৎ। এ সবই নিয়ম শৃঙ্খলাকে মান্য করেই ঘটছে।
এর ব্যতিক্রম ঘটলেই ছন্দপতন ঘটবে পৃথিবীর। মানুষ হারাবে স্বাভাবিক জীবন। শ্বাপদসংকুল অরণ্যে প্রাণিজগতেও আছে শৃঙ্খলা। তাদের আহার, বিহার, বাসস্থান সবকিছুতে যদি শৃঙ্খলা না থাকত তাহলে বনের প্রাণীরা নেমে আসত হাট-বাজারে, পাখিরা গান গাইত কোনাে কনসার্টে।
ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলাবােধ:
মানুষ জীবনে যা কিছু শেখে, যা কিছু অর্জন করে এর প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে ছাত্রজীবন। ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলাবােধ না থাকলে জীবন শেষে কোনাে প্রাপ্তিই তার জুটবে না। শৃঙ্খলাবােধ মানুষকে সুনিয়মে চালিত করে বলে ছাত্রজীবনে এর চর্চা থাকলে কোনাে ছাত্রের জীবনেই অনিয়ম ও উচ্ছশৃঙ্খলতা প্রবেশ করে না।
পক্ষান্তরে, যে ছাত্র নিয়মের অনুবর্তী নয় তার পক্ষে যথাসময়ে যথা কাজ করা অসম্ভব। ফলে পিছিয়ে যেতে যেতে ছাত্রের মনে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়। সে উদ্যম হারিয়ে নিজের জীবনকে অর্থহীন করে তােলে এমনকি বিপথগামী হওয়াও তার পক্ষে সহজ।
শৃঙ্খলা নেই এমন ছাত্র ছাত্রমহলে এবং শিক্ষকমহলে সমাদৃত হয় না। পক্ষান্তরে, শৃঙ্খলাবােধে উজ্জীবিত ছাত্র-শিক্ষকের স্নেহ আনুকূল্য এবং পৃষ্ঠপােষকতা লাভ করে জীবনকে উন্নত করার সুযােগ পায় । তাই ছাত্রজীবনেই শৃঙ্খলাবােধে জাগ্রত হওয়া জরুরি।
সমাজ ও জাতীয় জীবনে শৃঙ্খলা:
মানুষের সমাজিক জীবন একটি সংঘবদ্ধ জীবন। সংঘবদ্ধ জীবনে শৃঙ্খলার প্রয়ােজন। একটি সমাজে শৃঙ্খলা না থাকলে এর সুন্দর কাঠামােটি ভেঙে পড়ে। সমাজজীবনে নিয়ম শৃঙ্খলার অভাব ঘটলে একটি উচ্ছল গােত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ফলে সমাজে অত্যাচার, লুণ্ঠন এবং অসামাজিক ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি পায়।
যেখানে নিয়ম শৃঙ্খলা নেই সেখানে যে কেউ স্বেচ্ছাচারিতা চর্চার সুযােগ পায় অনায়াসে। ফলে অপেক্ষাকৃত নিম্নবর্গের মানুষের ওপর ক্ষমতাবানদের ক্ষমতা চর্চার সুযােগ ঘটে। আর এ কারণেই সাধারণ মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। তাই সমাজ জীবনে শৃঙ্খলার প্রয়ােজনীয়তাকে অস্বীকার করার সুযােগ নেই।
জাতীয় জীবনেও রয়েছে শৃঙ্খলাবােধের প্রয়ােজনীয়তা। রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের মধ্যে নিয়মকানুন মেনে চলার প্রবণতা না থাকলে রাষ্ট্র অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। আর অকার্যকর রাষ্ট্র মানেই অরাজকতা এবং সীমাহীন দুনীতি। শৃঙ্খলাপূর্ণ জাতি খুব দ্রুত উন্নতির শিখরে আরােহণ করতে সক্ষম হয়।
শৃঙ্খলাকে সভ্য সমাজের একটি লক্ষণ বলা যেতে পারে। তাই জাতির জাতীয় অগ্রগতির প্রয়ােজনে এবং সভ্য সমাজের বাসিন্দা হিসেবে আমাদের সকলের উচিত নিয়ম শৃঙ্খলাকে জীবনের অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করা।
শৃঙ্খলাবােধের গুরুত্ব:
মানুষ নিরন্তর সংগ্রামে গড়ে তুলতে চায় তার আকাঙ্ক্ষিত জীবন। জীবন আপনাআপনিই বিকশিত হয়।জীবনকে সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে হলে চাই জীবনের জন্যে অনুকূল পরিবেশ। আর শৃঙ্খলা জীবনে বয়ে আনে। সে অনুকূল পরিবেশ। শৃঙ্খলা জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায় সুন্দর আগামীর দিকে।
শৃঙ্খলার গুরুত্বটি অনুধাবন সহজ হয়। সৈনিক জীবনের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই। বিশাল সৈন্যবাহিনী যুদ্ধ বিগ্রহে কঠোরভাবে মেনে চলে শৃঙ্খলা। শৃঙ্খলা ভজা হলে। যুদ্ধের মাঠে পরাজয় অবধারিত হয়ে যায়। তাই সৈনিক জীবনের উদয়াস্ত সমস্তই শৃঙ্খলাপূর্ণ। বিশ্বের উন্নত দেশগুলাে প্রভূত উন্নতি করছে শৃঙ্খলাকে অবলম্বন করে। তাই ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে শৃঙ্খলার গুরুত্ব অপরিসীম।
শৃঙ্খলাহীনতার পরিণাম:
শৃঙ্খলাহীনতার পরিণাম অশান্তি। যে সমাজ শৃঙ্খলাবর্জিত সে সমাজের ধ্বংস অনিবার্য। শৃঙ্খলা নেই এমন সমাজে যে কেউ আইনকে তার নিজের হাতে তুলে নিতে বিলম্ব করে না। ফলে দুর্বল মার খায় সবলের হাতে। সীমাহীন। স্বেচ্ছাচারিতা সমাজের জন্যে বয়ে আনে অকল্যাণ।
পৃথিবীর এমন রাষ্ট্রের উদাহরণ সহজেই দেয়া যায় যে রাষ্ট্রে শৃঙ্খলা চর্চা নেই। ফলে যুগ যুগ ধরে উন্নতির চেষ্টা করেও তারা উন্নতির সাক্ষাৎ পাচ্ছে না বরং দেশের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ছে চরমপন্থিদের বিদ্রোহ। শৃঙ্খলার প্রতি আনুগত্য নেই বলেই আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ নানা দেশের অর্ধেক শাসনভার সরকারের হাতে, অন্য অর্ধেক বিদ্রোহী চরমপন্থিদের হাতে।
এ পরিস্থিতি সভ্য জাতির লক্ষণ হতে পারে না। তাই রাষ্ট্রের উচিত নিয়ম শৃঙ্খলা লজ্জিত হলে তার উপযুক্ত তদারকি করা যাতে জাতির চরম পরিণতি রক্ষা হয়। আইনশৃঙ্খলা অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনতে পারলেই জাতি ভয়াল পরিণতি থেকে রক্ষা পেতে পারে।
উপসংহার:
শৃঙ্খলাবােধ সম্পন্ন ব্যক্তির আচরণে সুনাগরিকের লক্ষণ প্রকাশ পায়। জীবনকে নান্দনিক পরিণতি দানে শৃঙ্খলা অনুশীলন অত্যাবশ্যক। সুনাগরিকের ব্যক্তি সাফল্য বৃহৎ অর্থে জাতীয় সাফল্যের নামান্তর। তাই জাতীয় জীবনে অগ্রগতি ও উন্নতি কাম্য হলে সবচেয়ে প্রয়ােজন শৃঙ্খলাবােধসম্পন্ন সুনাগরিকের।
আরও পড়ুনঃ
- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রচনা । Essay on commodity price rise and its remedy । প্রতিবেদন রচনা
- বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা । Bangladesher shororitu rochona । প্রতিবেদন রচনা
- আমার শখ রচনা । Essay on My Hobby। প্রতিবেদন রচনা
- ক্রিকেট খেলা রচনা । Essay on Cricket game । প্রতিবেদন রচনা ও সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নোত্তর
- করোনা ভাইরাস রচনা । Essay on Corona Virus । প্রতিবেদন রচনা