স্বদেশ কবিতা – আহসান হাবীব

স্বদেশ কবিতা – নদীমাতৃক বাংলাদেশের শস্য-শ্যামল মাঠে ফসলের হাট। গাছে গাছে পাখি। কবিতাটিতে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষের জীবনযাত্রার চিত্র অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

 

স্বদেশ কবিতা - আহসান হাবীব
স্বদেশ কবিতা – আহসান হাবীব

স্বদেশ কবিতা – আহসান হাবীব

 

এই যে নদী
নদীর জোয়ার
নৌকা সারে সারে,
একলা বসে আপন মনে
বসে নদীর ধারে
এই ছবিটি চেনা।
মনের মধ্যে যখন খুশি
এই ছবিটি আঁকি
এক পাশে তার জারুল গাছে
দু’টি হলুদ পাখি,এমনি পাওয়া এই ছবিটি
কড়িতে নয় কেনা।
মাঠের পরে মাঠ চলেছে
নেই যেন এর শেষ
নানা কাজের মানুষগুলো
আছে নানান বেশ,
মাঠের মানুষ যায় মাঠে আর
হাটের মানূষ হাটে,
দেখে দেখে একটি ছেলের
সারাটাদিন কাটে।
এই ছেলেটির মুখ
সারাদেশের সব ছেলেদের
মুখেতে টুকটুক।
কে তুমি ভাই,
প্রশ্ন করি যখন,
ভালবাসার শিল্পী আমি,
বলবে হেসে তখন।
এই যে ছবি এমনি আঁকা
ছবির মত দেশ,
দেশের মাটি দেশের মানুষ
নানান রকম বেশ,
বাড়ি বাগান পাখ-পাখালি
সব মিলে এক ছবি,
নেই তুলি নেই রং তবুও
আঁকতে পারি সবই।

 

স্বদেশ কবিতা - আহসান হাবীব
স্বদেশ কবিতা – আহসান হাবীব

 

 

স্বদেশ কবিতা ব্যাখ্যাঃ

হসান হাবীব রচিত ‘স্বদেশ’ কবিতায় কবি বাংলাদেশের প্রকৃতির ছবি এঁকেছেন। বাংলাদেশ চির সবুজের দেশ। এ দেশের মাঠে মাঠে ফলে সবুজ ফসল। এ সবুজের বুক চিরে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে নদী। নদীতে সারি সারি পালতোলা নৌকা চলে। গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে শিস দেয় দোয়েল। এ প্রকৃতির একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে রয়েছে সাগর। সব মিলে অপরূপ এ প্রকৃতি। শিল্পী রং দিয়ে প্রকৃতির ছবি আঁকেন। সে ছবি হয়তো টাকা দিয়ে কেনা যায়। কিন্তু প্রকৃতির রংতুলিতে আঁকা বাংলাদেশের অপরূপ প্রকৃতির এ ছবি কেনা যায় না। এ ছবি অমূল্য, পৃথিবীর কোনো কিছুর বিনিময়ে তা বিক্রি করা যায় না।

 

স্বদেশ কবিতা আবৃত্তিঃ

 

https://youtu.be/263qIz3CSUM

 

Competitive Exams Preparation Gurukul, GOLN Logo [ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি গুরুকুল, লোগো ]

কবি পরিচিতি:

আহসান হাবীব (২ জানুয়ারি ১৯১৭ – ১০ জুলাই ১৯৮৫) একজন খ্যাতিমান বাংলাদেশি কবি ও সাহিত্যিক। দীর্ঘ দিন দৈনিক বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক পদের দায়িত্ব পালন সূত্রে তিনি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে অভিভাবকের ভূমিকা রেখেছেন। তিনি চল্লিশের দশকের অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি হিসেবে পরিগণিত। বাংলা ভাষা সাহিত্যে অবদানের জন্য তাঁকে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৮ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক এবং ১৯৯৪ সালে মরণোত্তর দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।

আহসান হাবীব ১৯৪৭ সালের ২১ জুন বিয়ে করেন বগুড়া শহরের কাটনারপাড়া নিবাসী মহসীন আলী মিয়ার কন্যা সুফিয়া খাতুনকে। আহসান হাবীব দুই কন্যা (কেয়া চৌধুরী ও জোহরা নাসরীন) ও দুই পুত্রের (মঈনুল আহসান সাবের ও মনজুরুল আহসান জাবের) জনক ছিলেন। পুত্র সাবের একজন স্বনামখ্যাত বাংলা ঔপন্যাসিক ও প্রকাশনালয় দিব্যপ্রকাশের কর্ণধার।

১২-১৩ বছর বয়সে স্কুলে পড়ার সময়ই ১৯৩৩ সালে স্কুল ম্যাগাজিনে তার একটি প্রবন্ধ ধরম প্রকাশিত হয়৷ ১৯৩৪ সালে তার প্রথম কবিতা মায়ের কবর পাড়ে কিশোর পিরোজপুর গভর্নমেন্ট স্কুল ম্যাগাজিনে ছাপা হয় ৷ পরবর্তী সময়ে ছাত্রাবস্থায় কলকাতার কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হলে তার নিজের সম্পর্কে আস্থা বেড়ে যায়। স্কুলে পড়াকালীন তিনি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তুকে কবিতায় উপস্থাপিত করে পুরস্কৃত হয়েছিলেন।

ততদিনে অবশ্য দেশ, মাসিক মোহাম্মদী, সাপ্তাহিক বিচিত্রার মতো নামিদামি পত্রপত্রিকায় তার বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়ে গেছে৷ কলকাতায় গিয়ে শুরু হয় আহসানের সংগ্রামমুখর জীবনের পথচলা৷ সেখানে ১৯৩৭ সালে দৈনিক তকবির পত্রিকার সহ-সম্পাদকের কাজে নিযুক্ত হন । বেতন মাত্র ১৭ টাকা৷ পরবর্তীকালে তিনি ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কলকাতার বুলবুল পত্রিকা ও ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত মাসিক সওগাত পত্রিকায় কাজ করেন ৷ এছাড়া তিনি আকাশবাণীতে কলকাতা কেন্দ্রের স্টাফ আর্টিস্ট পদে ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কাজ করেন৷

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment